বাংলা সাহিত্যে যিশুর জন্ম বড়দিন

যিশুখ্রিস্টের বারোজন শিষ্যের মধ্যে সাধু টমাস ও বার্থলোমেয় দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টধর্মের সূচনা করেছেন। তবে বাংলায় খ্রিস্টধর্মের আগমন ঘটে পর্তুগীজদের সময়কালে। সে হিসাবে বাংলায় খ্রিস্টধর্মের আগমনের বয়স চলছে আনুমানিক পাঁচশত বছর। বাংলায় খ্রিস্টানরা সংখ্যালঘু হলেও বাংলা সাহিত্যে রয়েছে ব্যাপক অবদান। বিশেষ করে দোম আন্তনীও, উইলিয়াম কেরী ও ফাদার দ্যতিয়েন বাংলা সাহিত্যকে অনন্য মর্যাদায় নিয়ে গিয়েছেন।
১৬৬৮-৭০ খ্রিস্টাব্দে দোম আন্তনীও গাজীপুরের কালিগঞ্জের নাগরী কাথলিক মিশনএলাকায় থাকাকালীন ‘ব্রাক্ষ্মণ রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’ নামক গদ্য পুস্তক রচনা করেন। এটিই বাংলা সাধু গদ্যরীতির আদি নিদর্শন হিসেবে খ্যাত। ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে লিসবন শহরের ফ্রান্সিসকো দ্যা সিলভা ছাপাখানায় দোম আন্তনীও’র বইটি রোমান হরফে ছাপা হয়। এটাই ছাপাখানায় ছাপা প্রথম বাংলা বই। অন্যদিকে উইলিয়াম কেরী বাংলা সাহিত্যে গদ্যরীতির প্রবর্তক বলে পরিচিত। তিনি পদ্যের গঠনে বাংলা ভাষা রীতির প্রচলন ভেঙ্গে গদ্য ব্যবহার শুরু করেন। বাংলা ভাষায় বাইবেলের অনুবাদসহ বেশ কিছু পুস্তক রচনা করেন। ফাদার পল দ্যতিয়েন ছিলেন একজন বেলজিয়ান যাজক; যিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। কলকাতার দেশ পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ‘ডায়েরির ছেঁড়া পাতা’ ফাদার দ্যতিয়েনের পাঠকনন্দিত একটি বই।
ক্রিস্টমাসকে কেন্দ্র করে ইউরোপ বা খ্রিস্টান অধ্যূষিত দেশগুলোতে বহু সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে বাংলা সাহিত্যে যিশুর জন্মদিন বড়দিন বিষয়ক রচনার উপস্থিতি খুবই কম।এমনকি উপরে উল্লেখিত তিনজন ব্যক্তি দোম আন্তনীও, উইলিয়াম কেরী ও ফাদার দ্যতিয়েন বড়দিন সমন্ধে কোন লেখা লেখেননি। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ, সতেন্দ্রনাথ দত্ত, নজরুল, জীবনানন্দ ও বর্তমান বাংলা সাহিত্যের কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের রচনায় বড়দিনের ছাপ কিছুটা পাওয়া যায়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেও খ্রিস্টধর্ম ও বড়দিন বিষয়ে কিছু রচনা করেননি বলেই জানা যায়।
বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে ক্রিস্টমাস বাংলায় বড়দিন নামকরণ হবার সঠিক কারণ কোনটি তা বলা মুশকিল। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের (১৮১২-১৮৫৯) ‘বড়দিন’ নামক কবিতা থেকে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়া যায়। কবিতাটিতে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিনে ইংরেজ সাহেবদের আনন্দ, ফূর্তি ও কলকাতা শহরের একটি চিত্র প্রকাশ পায়-‘খৃষ্টের জন্মদিন, বড়দিন, বড়দিন নাম/বহু সুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম।’অন্যদিকে কবিতাটিতে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বড়দিনে হৃদয়ে বড় হবার একটি পথ বাতলে দিয়েছেন। বড়দিনের আধ্যাত্মিক ও মানবিক সৌন্দর্যকে তিনি সাবলীলভাবে প্রকাশ করে বলেন-‘ধনের অভাবে যেই, বড় দীন হয়/বড়দিন পেয়ে আজ, বড় দীন নয়।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঋগে¦দ পাঠে প্রথম যিশুখ্রিস্টের পরিচয় পান। অল্প বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ যিশুর প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। ফলে যিশুকে তিনি অনন্য উচ্চতায় স্থান দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের নিকটে যিশু হয়ে উঠেছিলেন ‘মানবপুত্র’ ‘মহাত্মা’ ‘পরম মানব’ ‘কল্যাণের দূত’ ও ‘সেবা পরায়ন প্রেমের দীক্ষাগুরু’। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ যিশুর কথা শিল্পের আকারে প্রকাশ করেন। বড়দিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি যিশুর জন্মের বিশ্বজনীনতার গুরুত্ব আরোপ করেন। বড়দিন যে প্রত্যেক খ্রিস্টবিশ্বাসীর বাহ্যিক উৎসবের চেয়ে বেশি আত্মমূল্যায়নের কাল তা রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বড়দিন নিছক এক উৎসবের বিষয় নয় কিন্তু খৃষ্টানদের আত্মনবায়নের সময়।’ তিনি লিখেছেন, ‘আজ তাঁর জন্মদিন এ কথা বলব কি পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে। অন্তরে যে দিন ধরা পড়ে না সে দিনের উপলব্ধি কি কালগণনায়। যেদিন সত্যের নামে ত্যাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেইদিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেইদিনই বড়োদিন- যে তারিখেই আসুক। আমাদের জীবনে তাঁর জন্মদিন দৈবাৎ আসে, কিন্তু ক্রুশে বিদ্ধ তাঁর মৃত্যু সে তো আসে দিনের পর দিন।’
রবীন্দ্রনাথ বড়দিনকে শ্রদ্ধার সাথে পালন করতেন। শান্তিনিকেতনে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ঘটা করে বড়দিন উৎসব উদ্যাপন শুরু করেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘খৃষ্টোতসব’। এখনো পর্যন্ত প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে ‘খৃষ্টোতসব’ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন শান্তি নিকেতনের মাঠে চলে পৌষমেলা আর অন্যদিকে ধ্বনিত হয় মধুর খ্রিস্টিয় প্রার্থনা সংগীত। রবীন্দ্রনাথ দেশের বাহিরে থাকলেও বড়দিনের আয়োজন করতেন। এক চিঠিতে তিনি হেমলতা দেবীকে লেখেন, ‘আজ খৃষ্টমাস। এইমাত্র ভোরের বেলা আমরা আমাদের খৃষ্টোতসব সমাধা করে উঠেছি। আমরা তিনজনে আমাদের শোবার ঘরের একটি কোণে বসে আমাদের উৎসব করলুম- কিছু অভাব বোধ হল না- উৎসবের যিনি দেবতা তিনি যদি আসন গ্রহণ করেন তা হলে কোনো আয়োজনের ত্রুটি চোখে পড়েই না। তাঁকে আজ আমরা প্রণাম করেছি, তাঁর আশীর্বাদ আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা একান্তমনে প্রার্থনা করেছি ‘যদ্ ভদ্রং তন্ন আসুব’। আমাদের সমস্ত ইচ্ছাকে নিঃশেষে পরাস্ত করে দিয়ে তাঁর ইচ্ছাকে আমাদের জীবনে জয়ী করুন, জীবন একেবারে পরিপূর্ণরূপে সত্য হোক।’
রবীন্দ্রনাথের বড়দিন উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িকতার রূপটিই প্রকাশিত হয়। বাংলার আদি উৎসের দিকে তাকালে বাঙ্গালীর চরম সহনশীলতার পরিচয়ই পাই। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মকে বাংলা মা তাঁর নরম মাটিতে লালন করেছেন। তবে বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার বীজগুলো মাথাচাড়া দিয়ে তাদের শক্তির জানান দিচ্ছে।বড়দিন সর্বজনীন উৎসব হিসাবে সাম্প্রদায়িকতাকে চূর্ণ করতে পারে। ‘বড়দিন’ নামক লেখায় রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘যাঁকে আমরা পরম মানব বলে স্বীকার করি তাঁর জন্ম ঐতিহাসিক নয়, আধ্যাত্মিক। প্রভাতের আলো সদ্য-প্রভাতের নয়, সে চিরপ্রভাতের। আমরা যখনই তাকে দেখি তখনই সে নূতন, কিন্তু তবু সে চিরন্তন। নব নব জাগরণের মধ্য দিয়ে সে প্রকাশ করে অনাদি আলোককে। জ্যোতির্বিদ জানেন নক্ষত্রের আলো যেদিন আমাদের চোখে এসে পৌঁছয় তার বহু যুগ পূর্বেই সে যাত্রা করেছে। তেমনি সত্যের দূতকে যেদিন আমরা দেখতে পাই সেইদিন থেকেই তাঁর বয়সের আরম্ভ নয়- সত্যের প্রেরণা রয়েছে মহাকালের অন্তরে। কোনো কালে অন্ত নেই তাঁর আগমনের এই কথা যেন জানতে পারি।’
রবীন্দ্রনাথ ‘শিশুতীর্থ’ কবিতায় মাতা মেরীর কোলে শিশু যিশুর চিত্র কল্পনা করেছেন। যিশুর জন্মে যে তারকা পথিকদের পথ দেখালো সেই তারকার রূপ পরিগ্রহ হয়েছে। ঐশকবি যে তাঁর পুত্রের জন্মে বীণার ঝংকার তুলে পৃথিবীকে জানান দিয়েছেন তা মানুষেরই জয় বলে আখ্যা দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, ‘মা বসে আছেন তৃণশয্যায়, কোলে তাঁর শিশু/ঊষার কোলে যেন শুকতারা/দ্বারপ্রান্তে প্রতীক্ষাপরায়ণ সূর্যরশ্মি শিশুর মাথায় এসে পড়ল/কবি দিলে আপন বীণার তারে ঝংকার, গান উঠল আকাশে/জয় হোক মানুষের, ওই নবজাতকের, ওই চিরজীবিতের।’
গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থে যিশুর জন্মের রূপ প্রকাশিত হয়েছে।যিশু স্বর্গ থেকে নেমে এসে পরমাত্মার সাথে মানবাত্মার মিলন ঘটিয়েছেন এবং না এলে ঈশ্বরের প্রেম হয়তো মিথ্যা হয়ে যেতো তা স্পষ্ট বুঝা যায়- ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর/তুমি তাই এসেছ নীচে/আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর/তোমার প্রেম হত যে মিছে।’
ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘বড়দিন’ কবিতায় যিশুর জন্মদিনে যার যার ধর্মকে হৃদয়ে রেখে স্বার্থহীন চিত্ত বিকশিত করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তাই তোমার জন্মদিনের নাম দিয়েছি আমরা বড়দিন/স্মরণে যার হয় বড় প্রাণ, হয় মহীয়ান চিত্ত স্বার্থহীন/আমরা তোমায় ভালবাসি, ভক্তি করি আমরা অখৃষ্টান/তোমার সঙ্গে যোগ যে আছে এই এশিয়ার, আছে নাড়ির টান।’
কাজী নজরুল ইসলাম শেষ সওগাত কাব্যগ্রন্থের ‘বড়োদিন’ নামক কবিতায় মানবিকতা বিপর্যয়ের চিত্র অঙ্কন করেছেন। কবিতায় সে সময়কার কলকাতায় ইংরেজদের শৃঙ্খলহীন বড়দিনের বাহ্যিক রূপবৈচিত্র দেখে পরাধীন ভারতবাসীর মনের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।মানুষের নিদারুণ কষ্ট দেখে যিশুর চোখের জলের প্রত্যাশা করছেন কাজী নজরুল। কবিতার শেষ অংশে বড়দিন বিষয়ে তিনি বলেন-‘বড়োদিন দেখে ছোটো মন হায় হতে চাহে নাকো বড়ো/হ্যাট কোট দেখে পথ ছেড়ে দেয় ভয়ে হয়ে জড়সড়!/পচে মরে হায় মানুষ, হায় রে পঁচিশে ডিসেম্বর/কত সন্মান দিতেছে প্রেমিক খ্রিস্টে ধরার নর!/ধরেছিলে কোলে ভীরু মানুষের প্রতীক কি মেষশিশু?/আজ মানুষের দুর্গতি দেখে কোথায় কাঁদিছ জিশু!
কাজী নজরুল তাঁর ‘দারিদ্র্য’ নামক কবিতায় খ্রিস্টের দরিদ্র্যতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে বড়দিনের একটি রূপ প্রকাশ করেন। যিশুর জন্ম গোশাল ঘরে যাবপাত্রে। জন্মের সময় তাঁর শরীরে কোন প্রকার কাপড় ছিলো না। আবার মৃত্যুতেও ক্রুশের ওপর যিশু ছিলেন বস্ত্রবিহীন। আর এটাই হচ্ছে যিশুর দরিদ্র্যতা; যা তাঁর সৌন্দর্যময়তাকেই প্রকাশ করেছে। খ্রিস্টের দরিদ্র্যতায় আকৃষ্ট হয়ে কবি বলেন,‘হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান/তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সন্মান।’
‘বারাঙ্গনা’ কবিতায় কবি সরাসরি যিশুর জন্মের বিষয় উল্লেখ না করলেও মা মেরীর কুমারী অবস্থায় যিশুকে জন্মদানকেই প্রকাশ করে। এই কবিতায় ‘অহল্যা ও মা মেরী’ যে মাতৃত্বে মহিমায় সমান ও সমান্তরাল তা স্পষ্ট। কবিতার একটি পংক্তিতে বলা হয়েছে-‘অহল্যা যদি মুক্তি লভে, মা মেরী হতে পারে দেবী।’
জীবনানন্দ দাশের বরিশালের বাড়ি ছিলো অক্সফোর্ড গির্জার পাশে। কথিত রয়েছে জীবনানন্দ দাশ এই গির্জাতে তাঁর প্রথম প্রেমিকা মনিয়ার দেখা পেয়েছিলেন। মনিয়ার মা ছিলেন এই গির্জার সেবিকা। মনিয়াকে নিয়ে জীবনানন্দ দাশ বহু কবিতা লিখেছেন, ‘মনিয়ার ঘরে রাত শীত আর শিশিরের জল।’ জীবনানন্দ দাশের বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় অক্সফোর্ডের এই লাল গির্জার কথা উল্লেখ রয়েছে, ‘লাল কাঁকরের পথ রক্তিম গির্জার মুণ্ড দেখা যায় সবুজের ফাঁকে।’
এখন ধারণা করাই যায় যে, জীবনানন্দ যখন বরিশালে অবস্থান করেছেন তখন বড়দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি নিশ্চয় গির্জায় গিয়েছেন। কলকাতার বড়দিন নিয়ে জীবনানন্দের অন্য ধরণের অনুভূতি রয়েছে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বড়দিনের সময়কালে তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে কর্মরত। সে সময় জীবনানন্দ আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘বড়দিনটা কলকাতার বাইরে কাটছে, যদি ফিরে যাওয়া যেত।’
বাংলা সাহিত্যের কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের লেখায় আমরা বড়দিনের ছোঁয়া পাই। তিনি তাঁর ‘মৃত্যুর নীলপদ্ম’ গল্পগ্রন্থের ‘নাজারেথ’ নামক গল্পে যিশুর জন্মের বিষয়টি এনেছেন, ‘আনন্দ করো নাজারেথবাসী, আজ সেই অমর পুত্রের জন্মদিন। আনন্দ করো নাজারেথবাসী,তোমরা যোসেফ ও মেরীকে এই পাহাড়ি শহরে এক সময় দেখেছিলে।’
ক্রিস্টমাসের বাংলা ‘বড়দিন’ বাঙ্গালীয়ানা পেয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বড়দিন উদ্যাপনও করা হয় সম্পূর্ণ বাংলা কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আবহে। তবে পরিতাপের বিষয়, যিশুর জন্মদিন বড়দিন বিষয়ক রচনা যত সামান্যই বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে।বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলী (চার্চ) কর্তৃক পরিচালিত ‘সাপ্তাহিক প্রতিবেশী’ প্রকাশনী থেকে মুদ্রিত খ্রিস্টধর্মীয় প্রার্থনা সঙ্গীতের সংকলন ‘গীতাবলী’তে স্থানকৃত পনের শত তিনটি গানের মধ্যে দুইশত চব্বিশটি গানই বড়দিন কেন্দ্রিক। বড়দিনের এই প্রার্থনা সঙ্গীতগুলোর বেশ কয়েকটি সুরারোপিত হয়েছে‘গ্রেগরীয়ান’ সংগীতের আদলে।গান যদি কবিতা হয়ে থাকে তাহলে ‘গীতাবলী’র বড়দিনের গানগুলো বাংলা সাহিত্যে যথাযথ মর্যাদায় স্থান পাবার যোগ্যতা রাখে।
বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় থেকে বড়দিনে অসংখ্য ম্যাগাজিন, পত্রিকা, পুস্তিকা প্রকাশিত হয় তবে সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে। আর যতটুকু প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় তাও নিজস্ব সীমারেখার বাইরে নয়। এই সীমারেখা ভেঙ্গে অথবা টপকে বাংলা সাহিত্যে স্থান নেবার এখনই সময়। যিশু ও বড়দিনকে যেমন বাঙ্গালীর একান্ত করে নিতে পেরেছি তেমনি বাংলা সাহিত্যেও যিশুর জন্মদিন বড়দিনকে ঠাঁই করানো দরকার। তবে সে চেষ্টা যেন হয় আপ্রাণ চেষ্টা।
লেখক পরিচিতি
কাথলিক যাজক
আন্ধারকোঠা মিশন
হরিপুর, পবা, রাজশাহী